প্রকাশিত: ২৩/০৬/২০১৭ ৩:২৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৫২ পিএম

লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বৃদ্ধ মা-বাবাকে আগুনের মধ্যে ফেলে যাওয়ার চেয়ে বরং মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছেন তাদের তিন সন্তান। রাত ৩টায় স্বজনদের ফোন করে নিজেদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন তারা। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের যুক্তরাজ্য সংস্করণ।

২০১৭ সালের ১৪ জুন সংঘটিত ওই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন একই পরিবারের পাঁচ বাংলাদেশি কমরু মিয়া (৮২), তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৬০), দুই ছেলে আবদুল হামিদ (২৯) ও আবদুল হানিফ (২৬) এবং কন্যা হুসনা বেগম (২২)। তাদের পৈত্রিক নিবাস মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আকাইলকুড়া ইউনিয়নের কৈশাউড়া গ্রামে।

আগুন গ্রেনফেল টাওয়ারে ছড়িয়ে পড়লে তিন ভাই-বোন স্বজনদের ফোনে জানান, গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লেগেছে। এ অবস্থায় বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভবনের ১৮ তলা থেকে বের করে আনা সম্ভব নয়। আর মা-বাবাকে আগুনের মধ্যে ফেলে রেখে তাদের পক্ষেও ঘর থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব নয়।

টাওয়ারে আগুন লাগার পর এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারতেন তিন ভাই-বোন। রাত ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তাদের বেরিয়ে আসার সুযোগ ছিল। কিন্তু এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মা-বাবার পাশে থাকাটাকেই বেছে নিলেন তারা।

রাত ৩টা ১০ মিনিটে এক খালাকে ফোন করে শেষ বিদায় জানান তারা। এ সময় তারা তাকে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

নিহত ভাই-বোনদের চাচাতো ভাই সামির আহমাদ বিজনেস টাইমসকে বলেন, ‘হানিফ খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল। সে বলেছে, তার সময় চলে এসেছে। তাদের জন্য যেন শোক বা বিলাপ করা না হয়। বরং অন্যরা যেন খুশি হন, কারণ তারা একটি অধিকতর ভালো জায়গায় যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা নিজের বাবাকে ছেড়ে ভবন থেকে বের হতে রাজি ছিল না। তাদের বাবা খুব ভালোভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন না।’

সামির আহমাদ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘তারা কি করতে পারতো? তারা কি নিজের বাবাকে ত্যাগ করতে পারতো?’

তিনি বলেন, ‘তারা ভীরুতা দেখায়নি। তারা মা-বাবার সঙ্গেই থেকেছে। তাদের কাছে পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। তারা একসঙ্গে বসবাস করতো এবং একসঙ্গেই তারা মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে।’

নিহত কমরু মিয়ার কন্যা হুসনা বেগমের বিয়ের কথাবার্তাও পাকাপাকি হয়ে ছিল। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে লিচেস্টারে তার বিয়ের কথা ছিল।

সামির আহমাদ জানান, এ মর্মান্তিক ঘটনায় হুসনা বেগমের হবু বর ‘পাগলের মতো’ হয়ে গেছেন। তিনি হাসপাতালগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ঘরে ফিরতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

২১ জুন বুধবার সন্ধ্যায় নিহতদের জন্য দোয়ার আয়োজন করেন তাদের বন্ধু ও স্বজনরা।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিভাগ এবং ইউএসএআইডিয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার, ভাসানচর এ অঞ্চলের ...

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিসহ তিনটি শর্ত হামাসের

মিশর ও কাতারের মধ্যস্থত গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তিনটি ধাপ অন্তর্ভুক্ত করতে ...